বাংলাদেশের কোন শক্তির কাছে অসহায় ভারত । ভারত। বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সাথে কখনো যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না ভারত, কিন্তু কেন বিস্তারিত থাকছে আজকের পোস্টে, খুবই মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
একটা উত্তপ্ত সন্ধ্যা দিল্লির সাউথ ব্লকের কনফারেন্স রুমে আলোচনার ঝড় বইছে, সামরিক বিশ্লেষকরা মুখোমুখি বসে টেবিলে বিশাল মানচিত্র বিছানো আলোচনার বিষয়। যদি বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে হয় তাহলে কি হবে, কেউ একজন গম্ভীর স্বরে বলল আমরা তো বৃহৎ শক্তি বাংলাদেশ আমাদের সামনে দাঁড়াতে পারবে একজন অভিজ্ঞ জেনারেল চুপ চাপ বসেছিলেন তিনি ধীরে ধীরে সামান্য ঝুঁকলেন ঠান্ডা গলায় বললেন এটা যদি তোমরা সত্যি ভাবো তাহলে ভয়ঙ্কর ভুল করবে কারণ যুদ্ধ হলে বাংলাদেশ ভুগবে ঠিকই কিন্তু ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
রুমের ভেতরে মুহূর্তেই নীরবতা নেমে এলো বাংলাদেশ এমন এক দেশ যেখানে যুদ্ধ করা শুধু কঠিন নয় প্রায় অসম্ভব,চারপাশে নদী খাল বিল আর নিচু জমির কারণে ভারী সামরিক যান চলাচলের সুযোগ কম ট্যাংক বা বড় অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করানো গেলে তা সহজেই আটকে পড়বে কাঁদার ফাঁদে । ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায় বহিরাগত শক্তিগুলো এখানে এসে বারবার সমস্যায় পড়েছে মুঘল আমলেও বাংলার নবাবরা প্রায় স্বাধীনভাবেই শাসন করতেন।
ব্রিটিশরা এত বছর ভারত শাসন করলেও বাংলার গ্রাম অঞ্চলে প্রবেশ করাটা তাদের জন্য কঠিন ছিল 1971 সালের যুদ্ধেও এটাই দেখা গেছে । গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে বাংলাদেশীরা পাকিস্তানের মত সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে হারিয়ে দিয়েছিল ।
এই ভূখণ্ডের দীর্ঘমেয়াদী সামরিক অভিযান চালানো যেকোনো দেশের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো বিশ্ব অর্থনীতির সমীক্ষাগুলো বলছে যদি সঠিক পথে এগোয় তাহলে 2050 সালের মধ্যে ভারত চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে কিন্তু কোন ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে এই স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে ।
যুদ্ধের খরচ ব্যাপক যা ভারতের অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে বিদেশী বিনিয়োগ কমবে বাজারে মন্দা নেমে আসবে যুদ্ধের ধাক্কায় দেশটির রাজনীতিতেও অস্থিরতা বাড়বে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টি হলে ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এতে ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে সুপার পাওয়ার হতে গেলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কূটনৈতিক দক্ষতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার হয় কিন্তু যুদ্ধ মানেই এই সবকিছু ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া।
চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র সামরিক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে চীন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে । ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধ বাঁধলে চীন সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা না করলেও সীমান্তে বিশাল সামরিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে । এতে ভারতকে একসঙ্গে দুই ফ্রন্ট যুদ্ধ করতে হবে । একদিকে বাংলাদেশ অন্যদিকে চীন ইতিহাস বলে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ চালানো কোন দেশের পক্ষেই সহজ নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারও এই ভুল করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছিল। চীনের এই সমর্থন বাংলাদেশের সামরিক শক্তিকেও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য যা সেভেন নামে পরিচিত সামরিক দিক থেকে ভারতের জন্য সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চল। এই রাজ্যগুলো ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত মাত্র 40 কিলোমিটার চওড়া একটি স্বরূপ পথ দিয়ে যা চিকেন নেক নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে চীন সহজেই এই অঞ্চল দখল করে ভারতকে দুই টুকরো করে দিতে পারে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। চীন দীর্ঘদিন ধরে অরুণাচল প্রদেশের একটা বড় অংশ নিজের দাবি করে আসছে যুদ্ধ বাঁধলে তারা সেই অঞ্চল দখল করতে চাইবে।
ভারতের সামরিক বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেন এই অঞ্চলকে রক্ষা করা তাদের কঠিন হবে সুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো মানে ভারত নিজের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলা। বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবসময় সুবিধাবাদী ভারত যতই শক্তিশালী হচ্ছে ততই যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ভবিষ্যতের প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দেখছে । যদি ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ভারতের উত্থান থামানোর সুযোগ হিসেবে নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিএআই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দিতে পারে কাশ্মীরে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের পথ আরো উন্মুক্ত হবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পশ্চিমাদের চাপের কারণে ভারতের অর্থনীতিতে বিশাল ধাক্কা লাগবে। ফলে যুদ্ধের ফলে যে আন্তর্জাতিক জোট ভারতের বিপক্ষে চলে যাবে সেটাই ভারতকে আরো বড় সংকটে ফেলবে সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারত শক্তিশালী হতে পারে কিন্তু যুদ্ধ কখনোই শুধু অস্ত্রের শক্তিতে জেতা যায় না। আমেরিকা ভিয়েতনাম দখল করতে পারেনি, রাশিয়া আফগানিস্তানে টিকতে পারেনি কারণ যুদ্ধের আসল শক্তি হলো ভূমির মালিকানা ও প্রতিরোধের মনোবল।
বাংলাদেশের মানুষ 1971 সালে যেমন প্রতিরোধ করেছিল তেমনি প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাদলে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্র চীন পাকিস্তান সক্রিয় হয়ে যাবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করবে গোপন অভিযানের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেওয়া হতে পারে ফলে যুদ্ধ শুরু করলে ভারতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দিল্লির সেই কনফারেন্স রুমের নীরবতা এখনো ভাঙ্গেনি সামরিক বিশ্লেষকেরা মুখে চাওয়াচা করছে ভারতের গণমাধ্যম যতই শক্তিশালী হয়ে ওঠার গল্প বলুক বাস্তবতা একেবারে আলাদা বাংলাদেশ ছোট হলেও তা ছিন্ন ভিন্ন করা সহজ নয় বরং যুদ্ধ হলে ভারতই ভেঙে পড়তে পারে সেই অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ জেনারেল উঠে দাঁড়ালেন মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে বললেন বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ মানেই ভারতকে আরো একবার ভারত রাখার লড়াইয়ে নামতে হবে রাত গভীর হচ্ছে রাতের নীরবতায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বরাবর দুটো পাখি উড়ে যাচ্ছে তারা যুদ্ধ চায় না শান্তি চাই নরেন্দ্র মোদি কি শান্তি চায়।
কোন মন্তব্য নেই